ঢাকায় নিযুক্ত ভারতীয় হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী মনে করেন, বাংলাদেশের সফলতা পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়, এমনকি ভারতের জন্যও।
বাংলাদেশের ৪৯তম বিজয় দিবস উপলক্ষে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় ভারতীয় হাই কমিশন আয়োজিত ‘প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে স্বাধীনতা যুদ্ধ ও তার মূল্যবোধ’ শিরোনামে নবীন-প্রবীণ সংলাপে তিনি এ মন্তব্য করেন।
দোরাইস্বামী বলেন, ‘গণতন্ত্রকে কার্যকর করতে সবাই সংগ্রাম করে যাচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশ কিংবা ভারতের নয়, সারা পৃথিবীর মানুষ এই সংগ্রাম করছে। তবে বাংলাদেশের সফলতা পৃথিবীর অনেক দেশের জন্য অনুকরণীয়, এমনকি ভারতের জন্যও। এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নেওয়ার আছে।’
আলোচনায় অংশ নিয়ে ভাস্কর্য নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়টি ইঙ্গিত করের সংসদ সদস্য ও মুক্তিযুদ্ধে শহিদ পরিবারের সন্তান অ্যারোমা দত্ত বলেন, ‘একাত্তরের সেই সব দানব আবার বেরিয়ে আসছে।’ নতুন প্রজন্মকে আবারও যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।
‘অপারেশন সার্চ লাইট’ নামে একাত্তরের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানিদের নৃশংস হত্যাযজ্ঞের কথা বলতে গিয়ে আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন অ্যারোমা দত্ত।
তিনি বলেন, ‘দাদু আর কাকুর রক্তের ওপর দিয়ে ২৯ মার্চ আমি বাড়ি থেকে বের হই। আমি ওই রাতে হায়েনাদের মুখ দেখেছিলাম। সেদিন কীভাবে বেঁচে গেছিলাম, আমি জানি না।’
বীর মুক্তিযোদ্ধা ও নাট্যকর্মী নাসির উদ্দিন ইউসুফও তরুণদের উদ্দেশ্যে তার যুদ্ধে যাওয়ার গল্প বলেন। তিনি জানান, ‘যুদ্ধ শুরু হলে আমি ভারতের ত্রিপুরার আগরতলা চলে যাই। সেখানে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করি। প্রশিক্ষণ শেষে ভারত সরকারের দেয়া অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে দেশে ফিরে যুদ্ধে যোগ দিই।’
তবে ঢাকার বাইরে থাকায় ১৬ ডিসেম্বর পাক বাহিনীর আত্মসমর্পণের সময় রেসকোর্স ময়দানে উপস্থিত থাকতে পারেননি বলে জানান তিনি।
তরুণ প্রজন্মকে সতর্ক করে তিনি বলেন, স্বাধীনতা পেলেও একটা সংকটে আছে দেশ। আবারও মৌলবাদী উত্থান দেখা যাচ্ছে। তাই তরুণদের রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।
ইতিহাসবিদ অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেন, ১৯৭২ সালের ওই সময়ে কোনো রাষ্ট্রনায়ক সেক্যুলারিজমকে সংবিধানে অন্তর্ভুক্ত করেননি। কিন্তু জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সেটা করেছিলেন। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ধারণ করে তরুণ প্রজন্মকে আগামীর নেতৃত্ব দেয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
যুদ্ধদিনে শরণার্থী শিবিরের জীবনযাপন আর মানুষের দুঃখ দুর্দশার গল্প উঠে আসে জুলিয়ান ফ্রান্সিসের কণ্ঠে। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধে এক কোটি শরণার্থীর কথা বলা হলেও, প্রায় দুই কোটি মানুষ বাস্তুচ্যুত হয়।
রচনা প্রতিযোগ
বাংলাদেশের বিজয় দিবসে ভারতীয় হাই কমিশন ও ইয়ুথ অপরচুনিটি যৌথ উদ্যোগে রচনা প্রতিযোগিতার ঘোষণা দেন হাই কমিশনার বিক্রম দোরাইস্বামী। রচনার বিষয়: ‘হুয়াট লিবারেশন মিনস টু মি?’ ১৮-৩৫ বছর বয়েসী যে কেউ এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে পারবেন।
১৬ ডিসেম্বর থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য হাই কমিশনের ওয়েবসাইটে (www.hcidhaka.gov.in) পাওয়া যাবে।